ঢাকা : বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও পরে আসামি নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার, রিমান্ডে নেওয়া এবং ১৬৪ ধারায় মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে।
এছাড়া ওই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ারে হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তও চাওয়া হয়েছে এই আবেদনে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ এই আবেদন করেন। এ আবেদনে মামলাটি পিবিআই অথবা সিআইডকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ইউনুছ আলী আকন্দ এই আবেদন করেন। এ আবেদনে মামলাটি পিবিআই অথবা সিআইডকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এফআরএম নামজুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে স্বরাষ্ট্র ও আইন সচিব, পুলিশের আইজি, পুলিশের ডিআইজি (বরিশাল), বরগুণার এসপিসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত রিফাতের পিতা আব্দুল আলিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রিফাত ফরাজী, টিকটক হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রদান আসামি নয়ন বন্ড ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে।
এমন অবস্থায় ১৬ জুলাই রাতে মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পরদিন তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই গত ১৯ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় মিন্নি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ অবস্থায় মিন্নির আইনজীবীরা ২১ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জামিনের আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেয়।
মিন্নিকে ওইদিন আদালতে হাজির করার আবেদন করা হলেও আদালত সে আবেদনও খারিজ করে। আগামী ৩০ জুলাই বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
পিবিআই-সিআইডির তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট : বরগুনার রিফাত হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বা সিআইডির তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
আবেদনে উদাহরণ হিসেবে ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলা ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়, ওই হত্যাকাণ্ডটি তদন্ত করেছে পিবিআই। তাই রিফাত হত্যাকাণ্ডের ন্যায়-বিচারে স্বার্থে পিবিআই অথবা সিআইডিকে দায়িত্ব ভার দেয়া হোক।
স্থানীয় পুলিশ এমন (রিফাত হত্যা) স্পর্শকাতর মামলার তদন্ত করতে অভিজ্ঞ নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বড় ধরনের মামলায় সিআইডি তদন্ত করে। সিআইডির কাজ হলো তদন্ত করা। কিন্তু স্থানীয় পুলিশের কাজ আসামিদের গ্রেফতার করা। সুতরাং রিফাত হত্যা মামলাও ন্যায় বিচারের স্বার্থে পিবিআই বা সিআইডি দ্বারা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হোক।
আবেদনে বলা হয়, রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি একমাত্র ছাড়া কোন দেখা বা চাক্ষস সাক্ষি নেই। অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ অবস্থায় দেখা সাক্ষিকে আসামি করলে প্রকৃত বিচার হবে না। সাক্ষির জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় নেয়া যাবে কিন্তু আসামি হিসেবে জবানবন্দি নেয়া যাবে না। অথচ মিন্নিকে ৫ দিনের রিমান্ড দেয়া হয় এবং তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়। তাই মিন্নির গ্রেফতার ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অবৈধ হবে বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।